একটি প্রভাবশালী মহল রংপুরের বদরগঞ্জের দামোদরপুর ইউনিয়নে পানি প্রবাহের খালের মুখ বন্ধ করে দেয়। এতে প্রায় ৮ হাজার একর স্বপ্নের সোনালী ধান পানির নিচে তলিয়ে গেছে। ফলে পাকা ধান ঘরে তোলার আগেই এমন সর্বনাশে দিশেহারা হয়ে পড়েছে কৃষক।
এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ চাষিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেছেন। এ ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার দামোদরপুর ইউনিয়নের সৌলারবিলসহ ১০ গ্রামে।
চাষিদের দাবি, দ্রুত সময়ে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না করা হলে তারা ধান ঘরে তুলতে পারবেন না। এ ছাড়া পানির নিচে ধান ডুবে থাকলে তা পচে নষ্ট হয়ে যাবে এবং চারা গজিয়ে উঠবে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, দামোদরপুর ইউনিয়নের মোস্তফাপুর মৌজায় সৌলারবিল, সিন্দুরের ডোবা, সিংগীমারী, হরিণ চোরা, দারছিড়া, ভেলাকোবা, ডাংগীরদোলা ও টোকনারবিল এলাকার প্রায় আট হাজার একর জমির উঠতি বোরো ক্ষেত পানিতে তলিয়ে আছে। এর মধ্যে প্রায় ৫ হাজার একর জমির ধান পানির নিচে সম্পূর্ণ ডুবে আছে।
বাকি ৩ হাজার একর জমির ধান আংশিক ডুবে আছে। পানি বাড়লে সেগুলো সম্পূর্ণ ডুবে যাওয়ার আংশকা করা হচ্ছে। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা বন্ধ করায় স্থানীয় কৃষকরা পড়েছেন সর্বনাশের মুখে।
ওই এলাকায় উজান থেকে বয়ে আসা বৃষ্টির পানি স্বাভাবিকভাবে ক্যানেল দিয়ে পাশের চিকলী নদীতে প্রবাহিত হয়। কিন্তু গত দুই বছর ধরে বোয়ালিরপাড় ও জলুবার এলাকায় একটি প্রভাবশালী চক্র পানি প্রবাহের মুখে মাছ ধরার বানা ও ক্যানেলের মুখ ভরাট করে চাষাবাদ করছে। এতে পানি প্রবাহিত হওয়ার পথ বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে স্থায়ীভাবে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে তলিয়ে আছে বোরো ধানের ক্ষেত।
চাষিদের অভিযোগ, ওই এলাকার বাবুল হোসেন, ফারুক হোসেন, দুলাল মিয়া, সাইদুল হক ও সাত্তার মিয়াসহ আরও কয়েকজন জোটবদ্ধ হয়ে পানি প্রবাহের মুখে মাছ ধরার বানা বসিয়েছে। এ ছাড়াও তারা ক্যানেলের মুখ ভরাট করে রেখেছে। এ কারণে বোরো ধানের জমির পানি সরছে না। ফলে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। এ অবস্থায় শত শত কৃষক পড়েছেন মহাবিপাকে। এর মধ্যে তলিয়ে যাওয়া পানিতে কেউ কেউ মাথা ডুবিয়ে ধানকাটার ব্যর্থ চেষ্টা করছেন।
সিন্দুরের ডোবা এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত চাষি রুহুল আমীন বলেন, পাকা ধান কাটার স্বপ্ন দেখছিলাম। কিন্তু কয়েকদিনের বৃষ্টি ও উজানের পানি নিম্নাঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হতে না পারায় এখন আমাদের সব পাকা ধানক্ষেত পানির নিচে ডুবে গেছে। এতে এক ছটাক ধানও ঘরে তুলতে পারব না। এবার মনে হয় আমাদের না খেয়ে মরতে হবে।
কৃষক আব্দুল লতিফ বলেন, একটি চক্রের সামান্য লোভের কারণে আমাদের মতো এতগুলা গরীব কৃষক সর্বনাশের মুখে পড়েছে। আমার ৭৮ শতাংশ জমির পাকা ধান এখন পানিতে ডুবছে।
সৌলারবিল এলাকার ধান চাষি শফিকুল ইসলাম বলেন, পানি নিষ্কাশনের জন্য স্থানীয় চেয়ারম্যানসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিদের দ্বারে দ্বারে গিয়েছি। কেউ সমাধানের জন্য এগিয়ে আসেননি। উপায় না পেয়ে ইউএনও কাছে লিখিত অভিযোগ করেছি। কিন্তু এতেও কোনো কাজ হচ্ছে না।
চাষিদের ক্ষতির কথা স্বীকার করে দামোদরপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজিজুল হক বলেন, এ নিয়ে বহুবার সমাধানের চেষ্টা করেছি। কিন্তু একটি চক্র মাছ ধরার নামে পানি প্রবাহের মুখে বানা দিয়েছে। এতে পানি নামতে পারছে না। এমনকি প্রশাসনের কাছেও বিষয়টি অবগত করেছি। এখন আইনগত পদক্ষেপ ছাড়া এর সামাধান হচ্ছে না বলে জানান তিনি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা মো. জোবায়দুর রহমান বলেন, প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে সরেজমিন দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) শরীফুল আলম বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর দ্রুতগতিতে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ওসি সাহেবকে বলা হয়েছে।